Tuesday 04 March, 2025

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:56, 6 February 2025

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাতে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণার আগে থেকেই উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উস্কানি চলছিল। আগেরদিনই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পেটোয়া সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছিল। গতকাল শেখ হাসিনার ভাষণের আগে সন্ধ্যায় বুলডোজার নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে উগ্রবাদীরা। সেখানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা জিহাদি স্লোগান দিয়ে। কিছুক্ষণ পরই শেখ হাসিনার ধানমন্ডি ৫ নম্বরের বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেয় তারা।

যখন শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণ চলছিল, একইসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতৃবৃন্দের বাড়িঘর, জাতির জনক ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল, নামফলক ইত্যাদি ৫ই আগস্টের পর যতটুকু অবশিষ্ট ছিল, তা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করছিল উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। শিক্ষার্থী পরিচয় বলা হলেও মূলত তারা জামায়াত-শিবির, হিযবুত তাহরীর, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের উগ্রবাদী কর্মী। তাদের হাত থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, আবাসিক হলের নামফলকও বাদ যায়নি। তারা সশস্ত্র অবস্থায় ভাঙচুর চালিয়ে যাচ্ছে কাল থেকে।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক ভাঙতে গিয়ে পড়ে এক উগ্রবাদীর কোমরও ভাঙে। তবুও ক্ষান্ত হয়নি জিহাদি জোশে ভোগা সন্ত্রাসীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে করা হয় ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল’। শুধু ঢাবি নয়, দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে থাকা হলগুলোর নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম লেখা হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, ভেঙে ফেলা হয় নামফলক।

বুধবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেয় শিক্ষার্থী নামের সন্ত্রাসীরা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, ভেঙে ফেলা হয় নামফলক। সেখানে শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন করে উগ্রবাদী গোষ্ঠী।

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের নাম মুছে দিতে ভাঙচুর ও বিক্ষোভ মিছিল করে উগ্রবাদীরা। বুধবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে তারা জড়ো হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক ভাঙচুর করে। এসময় বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪’ নাম লাগায় তারা।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল, শহিদ কামারুজ্জামান (চার নেতার অন্যতম) হল, শেখ রাসেল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে থাকা নামফলক ভেঙে ফেলে জিহাদিরা। ক্যাম্পাসজুড়ে থাকা বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে ফেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উগ্রবাদী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।

জাতির জনকের পরিবারের নামে থাকা ম্যুরাল ও নামফলক ভেঙে মুছে দিয়েছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উগ্রবাদী শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ ভবনের সামনে জড়ো হয়ে তারা জঙ্গি কায়দায় হাতুড়ি, শাবল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও নামফলক ভাঙে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ ভবন এবং দশতলা ভবনের নৌকার আদলে তৈরি নামফলকও ভেঙে দেয় তারা। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ক্যাম্পাসের অন্য নামফলকও ভেঙে দেয় তারা।

বুধবার রাতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে উগ্রবাদীরা। মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং মির্জা আজমের ম্যুরাল ভাঙচুর করে তাতে জঙ্গি কায়দায় আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেয়া হয়েছে। এছাড়া পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলকও মুছে ফেলা দিয়েছে জিহাদিরা।

বুধবার রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব ম্যুরালে শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ঝুলিয়ে ৩০ মিনিট ধরে জুতা নিক্ষেপ করে জিহাদিরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেখ রাসেল হলে এসে শেষ হয়। এসময় শেখ পরিবারের নামে কোনো স্থাপনা থাকবে না বলে ঘোষণা দেয় জিহাদি জঙ্গিরা।