ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল কিনছে অন্তর্বর্তী সরকার
৫ই আগস্টের পর থেকে বিবিধ কারণে সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমতে কমতে প্রায় তলানিতে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটের শংকা, বাড়ছে চালের দাম। এমতাবস্থায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে কয়েক দফায় চাল কিনেছে ড. ইউনূসের সরকার। যদিও বাজারে এর বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। কয়েক মাসের ব্যবধানে চালের এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
এবার ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি চালের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা ৬ পয়সা। এতে ৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার ৭ই জানুয়ারি সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এটিসহ এলএনজি ও কিছু অবকাঠামো সংক্রান্ত মোট চালটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-৫ এর আওতায় ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি টন ৪৫৮.৮৪ ডলার দরে ভারতের মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এ চাল আমদানি করা হবে। এতে সরকারের ব্যয় হবে ২ কোটি ২৯ লাখ ৪২ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৭৫ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
যদিও এর আগে এই চাল ভারত থেকে আনা হয়েছিল আরও কম দামে।
গত ১৮ই ডিসেম্বর ভারতে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ওই লটে প্রতি কেজি চালের দাম ধরা হয় ৫৪ টাকা ৮০ পয়সা। এরও আগে গত ২১শে নভেম্বর ভারতের এসএইএল এগ্রি কমোডিটিজ থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
অন্যদিকে পাকিস্তান থেকেও চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে পাকিস্তানি চালের দাম পড়ছে ভারতীয় চালের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতি টন পাকিস্তানি চাল আমদানি করা হবে ৪৯৯ ডলারে। যা এসে পৌঁছাবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে।
উল্লেখ্য, ৫ই আগস্টের আগে সরকারি খাদ্য গুদামে ১৫ লক্ষ টন চাল মজুদ ছিল। কিন্তু গত ৫ মাসে সেই মজুদ তো বাড়েনি, বরং নেমে এসেছে তলানিতে।
গত ৬ই নভেম্বর দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান-চাল সংগ্রহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সরকারি খাতে এই অর্থবছরে মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার টন চালের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
যদিও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩৩ টাকা কেজি দরের আমন ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আমনের ভরা মৌসুমেও সরকারি গুদামে যায়নি খুব বেশি চাল। বেশিরভাগই বিক্রি হয়েছে বাইরে। আজ ৭ই জানুয়ারি নাটোরের গুরুদাসপুরে মিনিকেট ধান বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা প্রতি মণ। অন্যদিকে মোটা চালের ধানের মণ ১ হাজার ৪০০ টাকার ওপরে।
অবস্থাদৃষ্টে পাইকাররা বলছেন, আগামী ঈদের আগে খুচরা বাজারে সাধারণ চালের দাম বেড়ে যদি একশ টাকা হয় প্রতি কেজি, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।