Saturday 26 April, 2025

বাংলাদেশ ছাড়ার সময় প্রাণের ভয়ে ছিলেন হাতুরাসিংহে

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:41, 21 April 2025

বাংলাদেশ ছাড়ার সময় প্রাণের ভয়ে ছিলেন হাতুরাসিংহে

বাংলাদেশ ছাড়ার সময় প্রাণের ভয়ে ছিলেন হাতুরাসিংহে

কোচ হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করার আগেই বরখাস্ত হন চন্দিকা হাতুরাসিংহে। আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন, এমন অভিযোগে শ্রীলঙ্কান কোচকে ছাঁটাই করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

হাতুরাসিংহে যখন বরখাস্ত হন তখন উত্তাল সময় পার করছিল বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল দেশে।

বাংলাদেশের এমন কঠিন সময়ে বরখাস্ত হওয়ার পর তাই ভয়ে ছিলেন তিনি। ছাঁটাই হওয়ার পর এত দিন এ নিয়ে মুখ না খুললেও আজ অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়া ওয়েবসাইট কোড স্পোর্টকে এমনই জানিয়েছেন হাতুরাসিংহে।

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বিসিবির সিইওর সঙ্গে শেষবার যা কথা হয়েছিল তার স্মরণ করে হাতুরাসিংহে বলেছেন, ‘বিসিবির সিইওর সঙ্গে শেষবার কথা বলার সময় তিনি আমাকে পরামর্শ দেন আমার চলে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, বোর্ডের কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

তোমার (আমার) কাছে যাওয়ার টিকিট আছে কি না? আমার জন্য সতর্কতার সংকেত ছিল যখন কিছুটা আতঙ্কিত ছিলাম।’

হাতুরাসিংহে আরো বলেন, ‘সাধারণত দেশের মধ্যে কোথায় ঘুরতে গেলে আমার সঙ্গে একজন ড্রাইভার এবং নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, আজকে তোমার তাদের প্রয়োজন আছে কি না? আমি বলি, না। আমার ড্রাইভার সঙ্গে ছিল।

এরপর আমি সরাসরি ব্যাংকে যাই। দেশ ছাড়ার আগে টাকা তোলার চেষ্টা করছিলাম। যখন ব্যাংকে যাই টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখতে পাই একজন ক্রিকেটারকে লাঞ্ছিত করায় বরখাস্ত চন্দিকা। পরে যখন বের হবো তখন ব্যাংকের ম্যানেজার বলেন, কোচ তোমার সঙ্গে আমি আসব। রাস্তায় লোকজন দেখলে তোমার জন্য তা নিরাপদ নয়।

এমনটা শোনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে জানান হাতুরাসিংহে। তিনি বলেছেন, ‘তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কারণ আমার দেশ ছাড়া প্রয়োজন। মধ্যরাতে এক বন্ধু আমাকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দেয়। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে দেশ ছাড়ার আগে আমি একটি ক্যাপ এবং হুডি পরেছিলাম। কোনো প্রোটেকশন ছিল না।’

গ্রেপ্তার হওয়ার একটা শঙ্কাও মনের ভেতরে কাজ করছিল হাতুরাসিংয়ের। তিনি বলেছেন, ‘দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে তারা আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারত। বিগত সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলে বিমান থামিয়ে তাকে নামানো হয় এবং তাকে লাথি মারা হয়। সব কিছু আমার মাথায় ঘুরছিল। এক্স-রে মেশিনের ভেতর দিয়ে প্রবেশের সময় বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, ‘দুঃখিত কোচ, সত্যি দুঃখিত যে আপনাকে যেতে হচ্ছে। আমার জীবন নিয়ে ভীত এবং তিনি বলছিলেন তিনি তার দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।’

বিশ্বকাপে নাসুম আহমেদকে চড় মেরেছেন, এমন অভিযোগ এনে তার ক্যারিয়ার বিসিবি শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছেন হাতুরাসিংহে। তিনি বলেছেন, ‘এটাই (কোচিং) সব কিছু ছিল। কারণ এটাই আমার ক্যারিয়ার। লাঞ্ছিতের অভিযোগ এনে তারা  আমার ক্যারিয়ার শেষ করেছে। এমনকি আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি। কখনো একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়াইনি। খেলোয়াড়দের কখনো ইমোশনও দেখাইনি। সম্ভবত হতাশায় তখন একটা ডাস্টবিনে লাথি মেরেছি। এটা কোচদের ক্ষেত্রে ঘটে। কিন্তু ঘটনাটাকে অন্যভাবে দেখানো হয়েছে। আমি ঠিক করে বলতে পারব না গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কতগুলো সুযোগ হারিয়েছি। এসব কিছু করেছি ভালোভাবে চুক্তি শেষ করতে। কিন্তু নতুন সভাপতি পূর্বপরিকল্পিতভাবে এমনটা করেছেন।’

বিশ্বকাপে এমন কিছু ঘটেনি বলে জানিয়েছেন নিক পোথাসও। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার এবং হাতুরাসিংহের সহকারি কোচ ওয়েবসাইটটিকে বলেছেন, ‘সেই চেনা ব্যক্তিকে নিয়ে বলছি যিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক এবং পেশাদার কোচ। তার মধ্যে এমন কিছু থাকলে এই পর্যায়ে এত দিন টিকতে পারতেন না। আমি মনে করি, ক্ষোভ থেকে সম্ভবত এই অভিযোগ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছে সে সম্ভবত ভাবেনি বিষয়টা এভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু এখন তাই ঘটেছে। আমার মনে হয় সে অনুভব করেনি কী বিশৃঙ্খলা হয়েছিল এবং বাংলাদেশ পরবর্তী হাতুরুর জীবনকে কতটা কঠিন করে তুলেছে। (খেলোয়াড়দের পিঠে টোকা দেওয়া) এটা সব সময় ঘটে। ভাষাগত বাধার কারণে আপনাকে অনেক সময় যোগাযোগের জন্য হাতের সংকেত ব্যবহার করতে হয়।’