
জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল: মাহফুজ আলম
জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ১২ই মার্চ, বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজ আইডিতে শাহবাগ আন্দোলন ও জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেওয়া দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
দীর্ঘ পোস্টের শুরুতে মাহফুজ আলম লেখেন, জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল। কিন্তু নাহিদ ইসলাম যেভাবে বলেছেন এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা কাফফারা দিয়েছেন। আমিও বলেছি, জামায়াতের যারা বাংলাদেশপন্থী, তারা এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখেন। জামায়াতের নতুন প্রজন্মের অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে কেউই পাকিস্তানপন্থী নন। ফলে স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ দিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা যাবে না।
২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে টেনে মাহফুজ আলম লেখেন, আমি নিজে শাপলায় এসেছিলাম লংমার্চে নবীজির প্রতি ভালোবাসায়। ৫ই মে-তে আমি আসতে পারিনি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াত নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না। আমরা মূলত নবীজির সম্মান ও ভালোবাসা সামনে রেখে ঢাকায় এসেছিলাম। আমি শর্ষিণাপন্থী যে মাদ্রাসায় পড়েছি, সেখানে জামায়াত নেতাদের ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী হিসেবে গণ্য করা হতো। আর জামায়াত নেতাদের ফাঁসিকে দেখা হতো তাদের আলেম ও সহি ইসলাম বিরোধিতার ফসল হিসেবে। জামায়াতকে আমরা ছোটবেলা থেকে আলেম-ওলামাবিরোধী হিসেবেই জেনে এসেছি।
মাহফুজ আলম লিখেছেন, অনেকেই হয়তো খেয়াল করেন না, অধিকাংশ শাপলার কর্মীরাই আসলে জামায়াতের আকিদা (বিশ্বাস ও কর্মপন্থা) ও নেতৃত্ববিরোধী। শাপলার অনেক নেতৃত্বই জামায়াতের আলেম ও পীরপন্থা বিরোধিতার শিকার। এমনকি অনেকেই জামায়াত ও শিবির নেতাদের কর্তৃক নিগৃহীত ও নিপীড়িত হয়েছেন। কিন্তু জামায়াত সফলভাবেই তাদের প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে। যেমন লীগ “শাহবাগী”দের ব্যবহার করেছে।
তিনি লিখেছেন, আমরা অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে উপনীত হয়েছি। এখানে জামায়াতকে বা শিবিরের কর্মীদের ‘রাজাকার’, ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলে বধযোগ্য করার যে বয়ান সেটার বিরোধী আমরা। তেমনি শাহবাগের ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। এ ইসলামফোবিয়ার শিকার আমি নিজে হয়েছি। পাঞ্জাবি–টুপি পরলেই জঙ্গিবাদী বলা থেকে শুরু করে মাদ্রাসাছাত্রদের ও আলেমদের বিমানবিকীকরণের জন্য শাহবাগ দায়ী। শাহবাগের সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতা–কর্মীদের ঊনমানুষে পরিণত করেছিল।
এখানে উল্লেখ্য, বিগত কিছুদিন ধরে মাহফুজ আলম শিবির অ্যাক্টিভিস্টদের ক্রমাগত বুলিইংয়ের শিকার হচ্ছেন অনলাইনে। কর্মক্ষেত্রেও একঘরে হচ্ছেন।
জানা গেছে, মাহফুজের একান্ত আস্থাভাজন রাখাল রাহাকে শাতিমে রাসুল আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা দায়ৈর করেছে বন্ধুপ্রতিম শিবির সমর্থকরা। এখন এসবের পেছনে মাহফুজের ইন্ধন রয়েছে কিনা এবং নিজের পিঠ বাঁচাতেই মাফফুজ হঠাৎ জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছেন কি না, এ নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টের সরকারবিরোধী আন্দোলনের আগে থেকেই মাহফুজ আলমের শিবিরসংশ্লিষ্টতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ছিল, তাই শিবিরের মতো গুপ্ত সংগঠনের রাজনীতির বৈধতা প্রদানের মাধ্যমে মূলত সংগঠনটিকে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা হিসাবে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।