আজ ছাত্রলীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
৭৭ বছর আগে, ১৯৪৮ সালে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) উদিত হয়েছিল এক আকাশছোঁয়া আশা নিয়ে, একটি সশক্ত সংগঠন যা ছাত্রসমাজের শক্তি এবং এক উজ্জ্বল আগামীের স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সময়ের প্রতিটি ধাপে বিসিএল দাঁড়িয়ে ছিল এক পথপ্রদর্শক হিসেবে, ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে এবং পরিবর্তনের উদ্দীপক হিসেবে। তবে, এই উদযাপন কখনোই সম্পূর্ণ হবে না যদি আমরা তাদের স্মরণ না করি যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন শহীদদের, যারা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পথে আলোকবর্তিকা হয়ে প্রজ্বলিত হয়েছেন।
আমরা তাদের স্মরণ করি শোক নয়, শ্রদ্ধা নিয়ে। এই সাহসী প্রহরীরা, যারা কখনোই বিপদের সামনে পিছু হটেনি, অবিচল থেকে সংগ্রাম করেছেন। নিপীড়নের অন্ধকারে তারা হয়ে উঠেছিল আলো; ভয় ও নিরবতায় তারা হয়ে উঠেছিল আমাদের কণ্ঠস্বর। তারা জানত কি মূল্য দিতে হতে পারে, তবুও তারা নির্ভীকভাবে এগিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের স্বপ্ন ছিল এক মুক্ত, ন্যায়বিচারপূর্ণ বাংলাদেশ যেখানে মানবতা সমুন্নত থাকতে পারে।
যখন দায়িত্বের ডাক এসেছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্যরা সেই ডাকে হৃদয়ভরে সাড়া দিয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তারা ছিল প্রথম সারিতে, মাতৃভাষা বাংলা রক্ষায় আপসহীন। সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর এই নামগুলো আমাদের ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়েছে ভাষার শক্তি, সংস্কৃতির পবিত্রতা এবং আমাদের জনগণের অটল মনোবল।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবারও রূপ নিয়েছিল মুক্তির সৈনিকের। তারা শুধু অস্ত্রের মাধ্যমে নয়, নিজেদের বিশ্বাসের শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করেছে। অনেকে বাড়ি ফিরে আসেননি, তাদের স্বপ্ন চিরকাল বেঁধে গেছে আমাদের মাটি ও নদীতে। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতার প্রাণবিন্দু হয়ে উঠেছিল, যা আজও আমাদের কাছে এক অমূল্য উপহার।
এমনকি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে, সংগ্রাম থামেনি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যাত্রা ছিল অবিচল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে, শিক্ষা, সাম্য, এবং অগ্রগতির পক্ষে কাজ করেছে। ৭৭ বছর ধরে আমাদের জন্য এক পথপ্রদর্শক তারা, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ রক্ষায় একনিষ্ঠভাবে কাজ করে এসেছে।
আজ, এই ঐতিহাসিক অর্জন উদযাপন করতে গিয়ে আমাদের উচিত এই সাহসী ব্যক্তিদের অবদান গভীরভাবে স্মরণ করা। তাদের স্বপ্ন, যেটি ছিল এক উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, তাদের বিশ্বাস যে একদিন আমরা এই দেশকে স্বাধীন, সুষ্ঠু এবং সমৃদ্ধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব—এগুলি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে রয়ে গেছে। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের শিক্ষা দেয় যে, স্বাধীনতা কোনো সহজ অর্জন নয়, অগ্রগতি সাধনের জন্য দৃঢ়তা ও একতা প্রয়োজন, এবং একতা যে কোনো চ্যালেঞ্জকে জয় করতে পারে, তা তারা আমাদের শিখিয়েছে।
তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। প্রতিটি শিশু যিনি বাংলায় কথা বলেন, প্রতিটি পতাকা যা আকাশে উত্তোলিত, এবং প্রতিটি শান্তির মুহূর্ত যা আমরা উপভোগ করি—এগুলি তাদের সাহসের প্রমাণ। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন এক বাংলাদেশে, যেখানে আমাদের জাতি সমুন্নত হয়ে দাঁড়াতে পারে, এবং সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।
৭৭ বছর হলো একটি অটল দৃঢ়তার প্রমাণ, এক স্পৃহা যা কখনো নিচে নেমে যায়নি। এটি একটি যাত্রা যা লেখা হয়েছে রক্ত, স্বপ্ন, সাহস, এবং আশা দিয়ে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশের যুব সমাজের অবিচল ইচ্ছার প্রতীক হয়ে, এগিয়ে চলেছে এবং চলতে থাকবে।
আমাদের উচিত তাদের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা, এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজেদেরকে নিবেদিত রাখা। আমাদের একটি জাতি হিসেবে উন্নত, ন্যায়পরায়ণ, এবং ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে রয়ে যাবে, যাতে আমরা আরও ভালো হয়ে উঠি, কঠোর পরিশ্রম করি, এবং তাদের স্বপ্নকে চিরকাল মনে রাখি।
আজ, আমরা সেই মহান ব্যক্তিদের আত্মত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে আছি। তাদের প্রতি আমাদের ঋণ কখনোই পূর্ণ হবে না, তবে আমরা তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারি এবং তাদের লড়াইয়ের মূল্যবোধ রক্ষা করতে পারি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে, আমরা অঙ্গীকার করি, তাদের পথচলা অব্যাহত রাখতে, দেশের জন্য কাজ করতে এবং তাদের জন্য লড়াই করতে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতি তার শহীদদের, তার ইতিহাস এবং তার ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। তার আলোকবর্তিকা আমাদের পথপ্রদর্শক হোক এবং আমরা কখনোই তাদের আত্মত্যাগ ভুলে না যাই। তাদের উত্তরাধিকার যেন আমাদের অনুপ্রাণিত করে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।
৭৭তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সালাম। তোমাদের গল্প আমাদের গল্প, তোমাদের আত্মত্যাগ আমাদের চিরকালীন গৌরব। একসঙ্গে, আমরা সামনে এগিয়ে যাব, ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে, একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়বিচারপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত বাংলাদেশের দিকে।