
সুনামগঞ্জে যুবলীগ নেতার ১২শ মণ ধান কেটে নিয়েছে যুবদল নেতা
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর থেকে উপজেলা যুবলীগ নেতা তকবির হোসেনের জমির ১২শ মণ ধান রাতের আঁধারে কেটে নিয়েছেন উপজেলা যুবদলের নেতা। শুক্রবার রাতে হার্ভেস্টর যন্ত্র লাগিয়ে তিনি ও তার সশস্ত্র লোকজন এই ধান কেটে নিয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে শাল্লা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়।
জানা গেছে শাল্লা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ভাতিজা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন তার ভাই ও স্বজনদের নিয়ে শুক্রবার রাতে নিজেদের বাড়ি সুলতানপুরের পার্শবর্তী ছায়ার হাওরে একই গ্রামের যুবলীগ নেতা তকবির হোসেনের ১৫ একর জমির ধান কেটে নেন।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে যুবলীগ নেতা তকবির হোসেনের ছোট ভাই নবি হোসেন পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকেও জানালেও তারা তাৎক্ষণিক কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্টের পর জাকির হোসেন ও তার স্বজনরা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং সম্পদ লুটপাটসহ প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে।
জানা গেছে, উপজেলা যুবলীগের নেতা তকবির হোসেন ৫ই আগস্টের পর এলাকাছাড়া। তার নিজ গ্রাম সুলতানপুরের বাসিন্দা বিএনপি নেতা জাকির হোসেন ও তার ভাতিজা আলতাব হোসেনের সঙ্গে বিরোধ আছে। জমি নিয়েও দ্বন্দ এবং মামলা-মোকদ্দমা চলমান। ৫ই আগস্টের পর বিএনপির এই নেতারা আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে।
যুবলীগ নেতা তকবির হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করেও কোন সুফল পায়নি আমার পরিবার। থানার মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে জমির অবস্থান হলেও পুলিশকে জানিয়ে ধান রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আজ সকালে পুলিশ গ্রামে গিয়েছিল। খবর পেয়ে জমি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাও। তারা ধান কেটে নেওয়ার সত্যতা পেয়েছেন।
পুলিশ জানায়, আমরা তকবির হোসেনের ধান কেটে নেওয়ার জন্য তার ভাই নবীর হোসেনকে বলেছিলাম। কিন্তু গতরাতে তাদের হার্ভেস্টর যন্ত্রের ড্রাইভারকে তুলে দিয়ে ধান কেটে নিয়েছেন যুবদল নেতা ও তাদের লোকজন। প্রায় ১২শ মণ ধান কেটে নেয় বলে জানা গেছে।
জমির মালিক যুবলীগ নেতা তকবির হোসেন আরো বলেন, বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের ইন্ধনে তার ভাতিজা যুবদল নেতা আলতাব ও তার ভাইরা আমাদের প্রায় ১৫ একর জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে গেছে। শুক্রবার সকালেই ছোট ভাইকে দিয়ে থানায় অভিযোগ করিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও সহযোগিতা করেনি।
অভিযুক্ত যুবদল নেতা আলতাব হোসেনের সঙ্গে কথা চাইলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার বড় ভাই দলিল লেখক আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা। আমরা কারো জমির ধান কাটিনি। আমাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও অভিযুক্ত ব্যক্তি জাকির হোসেন বলেন, ধান কাটার বিষয়ে আমি কিছু জানি না, আমি থানা সদরে থাকি। তবে জমি তার ভাতিজাদের দাবি করে তিনি বলেন, ৮ কেদার জমি তকবিরের দাদার কাছ থেকে অনেক আগে আনোয়ারের বাবা কিনেছিল। তকবিররা গত ১০ বছর ধরে দখলে রেখেছে, এখন এক বছর ধান কাটতে এত সমস্যা কেন জানতে চান তিনি।
শাল্লা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ৮ কেদার জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্ধ আছে। কবিরের ভাইকে ধান কাটার জন্য বলেছিলাম। প্রয়োজনে পুলিশ পাঠিয়ে সহযোগিতার কথাও বলেছি। রাতের আধারে যুবদল নেতা ধান কেটে নিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা গিয়ে ধান কেটে নেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছি।