
আদালতকে নির্যাতনের চিহ্ন দেখালেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ অভিযোগ করেছেন, পুলিশি রিমান্ডে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আদালতে জেরার সময় কাঠগড়ায় কেঁদে তিনি তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখান।
২৩শে এপ্রিল, বুধবার সকাল ১০টার দিকে তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরানো ছিল।
গত বছরের ৫ই আগস্টের উগ্রবাদী হামলায় রাষ্ট্র ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর উত্তরায় ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বাড়িতেও সন্ত্রাসী হামলা হয়। সেসময় তার মেয়েকে জিম্মি করে তার ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। তার শরীরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সেই আঘাতের চিহ্ন ছিল। সেদিন তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তাদের বাড়িঘর ভাঙচুরসহ তাকে ও তার মেয়ের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়। এরপরও তিনি নিরাপত্তা পাননি।
এর প্রায় ৮ মাস পর মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে এই মামলাটি একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৫ই আগস্টের পর দেশে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সময়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ওপর হামলা ও নির্যাতন বিষয়টি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা তার সহপাঠী-সহকর্মীরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আজ, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ কাঠগড়ায় ওঠার পর দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। এ সময় তাকে সান্ত্বনা দেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত।
আদালতে ব্যারিস্টার তুরিনের আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশ্যে জানান তাকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং তিনি কিছু কথা বলবেন। পরে বিচারকের অনুমতি নিয়ে ব্যারিস্টার তুরিন বলেন, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ন্যায়বিচার চাই। কোনোকালে আমার রাজনৈতিক পদ-পদবি ছিল না। আমি শুধু পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি।”
শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং হাঁটতে পারছেন না বলে আদালতকে জানান তিনি।
পরে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “যা বলছে তা সত্য না, মিথ্যা কথা বলে এ ঘটনা অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে।” পিপির কথার জবাবে পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় নিজের পায়ে নির্যাতন হওয়ার চিহ্ন বিচারককে দেখান ব্যারিস্টার তুরিন।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালত তাকে উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। এরপর পুলিশ প্রহরায় তাকে হাজতখানায় নেওয়া হয়।
গত ৭ই এপ্রিল রাতে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈছা আন্দোলনে আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ৮ই এপ্রিল তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ১২ই এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনের শিক্ষক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি প্রসিকিউটর হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামির আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনায় ছিলেন।