
পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু এসএসসি পরীক্ষা
গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী নিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার, ১০ই এপ্রিল শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, কেউ যদি তিন বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবনে ফিরে না আসে, তাহলে তাকে ‘ঝরে পড়া’ হিসেবে ধরা হয়। তাদের মতে, দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই এবার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
এ বছর সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭৮ জন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন পরীক্ষার্থী—এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন, যার মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার মাধ্যমে এবারের এসএসসি শুরু হয়েছে। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ৩০ হাজার ৪৫টি স্কুল ও মাদ্রাসার ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। সারাদেশে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা চলবে আগামী ১৩ মে পর্যন্ত।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ৯৫ হাজার ২২২ জন। ২০২৪ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন, ২০২৩ সালে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং ২০২১ সালে ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন।
অর্থাৎ, এবারের পরীক্ষার্থী সংখ্যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
শিক্ষাবিদদের মতে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়া নয়। নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয় না। কেউ কেউ দারিদ্র্য, বাল্যবিয়ে, অসুস্থতা বা টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতে না পারার কারণে পরীক্ষায় বসতে পারে না। তবে তারা পরবর্তীতে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে।
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ ফেরদাউস বলেন, “নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা মানেই সবাই বোর্ড পরীক্ষায় বসবে—তা নয়। দুই বছরে নানা কারণে অনেকেই ঝরে পড়ে। তিন বছরের গড়ে অনুপস্থিতি বেশি হলে বলা হয় ঝড়ে পড়া।”
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা মনে করেন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার এখনো বন্ধ হয়নি। একসময় উপবৃত্তির কারণে স্কুলমুখী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছিল। তবে এখন উপবৃত্তির পরিমাণ এতটাই কম যে, তা দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উৎসাহিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষার্থীদের কাজেও লাগিয়ে দিয়েছেন।জীবন যাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক অভিভাবক এটা করছেন।
তাছাড়া, ইবতেদায়ি বা আলিয়া ধারার মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হারও কমেছে। অনেকেই এখন হাফেজি শিক্ষা গ্রহণ করছে বা কওমি ঘরানার মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে, ফলে মূলধারার শিক্ষায় শিক্ষার্থী কমছে।
সাম্প্রতিককালে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে অনেক। ফলে অনেক পরিবার স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে। এসব কারণেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।