
টিউলিপকে নিয়ে দুদকের অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ : আইনজীবী
যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড এলএলপি বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর বিরুদ্ধে তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ‘মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও ভিত্তিহীন’ আখ্যা দয়ে একটি কড়া চিঠি প্রেরণ করেছেন।
দুদক টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুললেও, তাঁর আইনজীবী দাবি করেছেন যে এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই এবং এগুলো সরাসরি টিউলিপের কাছে উপস্থাপনই করা হয়নি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক একজন যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং ২০১৫ সাল থেকে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তিনি ২০২৪ সালের ৯ই জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৪ই জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে, দুদক, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে গণমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অভিযোগগুলো যুক্তরাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল বলে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার টিউলিপের পদত্যাগ গ্রহণ করে বলেন, স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তাঁর বিরুদ্ধে মন্ত্রী আচরণবিধি লঙ্ঘন বা আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাননি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে তাঁর জন্য দরজা খোলা রয়েছে।
টিউলিপের আইনজীবী দাবি করেছেন, দুদক বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ সরাসরি তাঁর কাছে উত্থাপন করা হয়নি। বরং, গণমাধ্যমের মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচার করে তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে। চিঠিতে চারটি উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে:
১. ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ টেলিগ্রাফের একজন সাংবাদিক দাবি করেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে টিউলিপের লন্ডনের ফ্ল্যাট কেনার সম্পর্ক রয়েছে।
২. ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ স্কাই নিউজ জানায়, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, টিউলিপের শেখ হাসিনার সময়ে সম্পদ অর্জনের বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়া উচিত।
৩. ৫ই মার্চ ২০২৫-এ স্কাই নিউজে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুদক এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে এবং টিউলিপের বাংলাদেশে প্রচুর সম্পদ রয়েছে।
৪. ১৩ই মার্চ ২০২৫-এ ফিনান্সিয়াল টাইমসে দুদকের দেওয়া নথিতে দাবি করা হয়, টিউলিপ জাল নথি ব্যবহার করে তাঁর বোনের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর করেছেন।
টিউলিপ এই অভিযোগগুলো পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন:
-তিনি রূপপুর প্রকল্পে কোনোভাবে জড়িত ছিলেন না এবং এটি থেকে কোনো সুবিধা নেননি।
-২০১৩ সালে তিনি শেখ হাসিনার সাথে মস্কো সফরে গিয়েছিলেন, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেননি।
-তাঁর লন্ডনের ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়া, যা রূপপুর প্রকল্পের ১০ বছর আগের ঘটনা।
-ঢাকার গুলশানের সম্পত্তি তিনি ২০১৫ সালে তাঁর বোনকে হস্তান্তর করেন, যা বৈধভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং এর সাথে পূর্বাচল প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
দুদকের প্রতি আইনি সতর্কতা
চিঠিতে দুদককে অবিলম্বে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ অভিযোগ তৈরি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আইনজীবী জানিয়েছেন, যদি কোনো বৈধ প্রশ্ন থাকে, তবে তা ২৫শে মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে তাঁদের কাছে পাঠাতে হবে। অন্যথায়, ধরে নেওয়া হবে যে কোনো বৈধ অভিযোগ নেই।
এছাড়া, টিউলিপের আইনি অধিকার সংরক্ষিত রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত চিঠি দূর্নীতি দমন কমিশনের সাথে সাথে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী দাবি করেছেন, দুদকের অভিযোগগুলো যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা এবং তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এই ঘটনা বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।