Monday 31 March, 2025

তিলাওয়াতে ভুল নিয়ে মসজিদের ভেতরে ইমামের পা ভাঙল উগ্রবাদী তরুণ

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:54, 20 March 2025

তিলাওয়াতে ভুল নিয়ে মসজিদের ভেতরে ইমামের পা ভাঙল উগ্রবাদী তরুণ

তিলাওয়াতে ভুল নিয়ে মসজিদের ভেতরে ইমামের পা ভাঙল উগ্রবাদী তরুণ

 
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় তারাবির নামাজ চলাকালীন তিলাওয়াতে ভুল ধরাকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরেই ইমামকে পিটিয়ে তার পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক উগ্রবাদী তরুণের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আরও চার মুসল্লি আহত হয়েছেন।

১৯শে মার্চ, বুধবার রাতে উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের চৌবাড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামের বায়তুল আমান জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ইমাম মো. আবদুল্লাহ (৫০) বর্তমানে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত মুসল্লি দেলোয়ার হোসেন (৬০) ও জাহিদ হাসান (২২) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন, আর বাকি দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

জানা যায়, চৌবাড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামের বায়তুল আমান জামে মসজিদের নিয়মিত ইমাম হলেন মো. আবদুল্লাহ। তবে রমজানে খতম তারাবি পড়ানোর জন্য আলাদা দুজন হাফেজ রাখা হয়। বুধবার তারাবির নামাজের সময় ওই হাফেজদের একজন কিরাতে ভুল করলে তা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে নামাজ শেষ করা হয়।

এরপর বিতর নামাজ শেষ হলে ইমাম আবদুল্লাহ মোনাজাত করার আগমুহূর্তে মোহাম্মদ তালহা নামের এক উগ্রবাদী তরুণ তারাবির তিলাওয়াতের ভুল নিয়ে মাইকে কিছু বলবেন বলে সামনে এগিয়ে এসে ইমামের কাছ থেকে মাইক্রোফোন চান। তবে ইমাম তাকে মাইক্রোফোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তালহা উত্তেজিত হয়ে ইমামকে থাপ্পড় ও ঘুষি মারেন।

মুসল্লিরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে তালহা মসজিদে থাকা কাঠের লাঠি নিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় ইমাম মেঝেতে পড়ে গেলে তাকেও মারধর করেন তালহা।

পরে স্থানীয়রা আহত ইমামসহ অন্যদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে ইমাম মো. আবদুল্লাহকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শিমুল তালুকদার জানিয়েছেন, “মো. আবদুল্লাহ রাত পৌনে ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। এক্স-রে করে দেখা গেছে, তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে।”

মুসল্লিদের ভাষ্য, অভিযুক্ত মোহাম্মদ তালহা নিজে হাফেজ, মসজিদের পাশেই তার বাড়ি। তিনি মসজিদের ইমাম হতে চাইলেও তার উগ্রবাদী চিন্তাধারার কারণে স্থানীয়রা তাকে গ্রহণ করেননি। তাদের অভিযোগ, ইমামতি না পাওয়ার ক্ষোভ থেকেই তিনি মসজিদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত দায়িত্বরত ইমামকে মারধর করেন।

তবে এ বিষয়ে মোহাম্মদ তালহা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মীর মুসতাহীদ আলী বলেন, “মসজিদের ইমামের ওপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই তালহাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কয়েকজন মুরব্বি থানায় গিয়ে ঘটনার চূড়ান্ত বিচার করার লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে তালহাকে ছাড়িয়ে আনেন।”

ভুক্তভোগী ইমাম মো. আবদুল্লাহ বলেন, “স্থানীয় মুরব্বিরা বিচার করার আশ্বাস দেওয়ায় থানায় কোনো অভিযোগ করিনি। এমন কিছু ঘটবে, তা কখনো ভাবিনি।”

এ বিষয়ে কামারখন্দ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রূপ কর বলেন, “খবর পেয়ে রাতেই অভিযুক্তকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছিল। তবে স্থানীয় মুরব্বিদের অনুরোধে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার অঙ্গীকারে মুচলেকা নিয়ে দুপুরে তাকে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।”