
ইউনূস-সরকারের বক্তব্যের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার ফরাসী দুতাবাসের!
ঢাকায় অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি বিবৃতি শেয়ার করা পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে। এই বিবৃতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের উত্থান নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।
তবে, ফরাসি দূতাবাসের এই পোস্ট শেয়ারের ঘটনা দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়, যার ফলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৭ই মার্চ মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসি গ্যাবার্ড ভারত সফরকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন এবং ইসলামি সন্ত্রাসবাদের উত্থান নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।
এর জবাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ১৭ই মার্চ রাত ১১টায় ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে তুলসির মন্তব্যকে “ভিত্তিহীন” ও “ক্ষতিকর” বলে আখ্যায়িত করা হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, এই পোস্টটি পরদিন ১৮ই মার্চ সকাল ১১টার দিকে ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ারও করে।
ফরাসি দূতাবাসের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা, যাকে কেউ কেউ গণহত্যার সমতুল্য বলে অভিহিত করেছেন, তা ফ্রান্সের মতো একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র কীভাবে অস্বীকার করতে পারে!
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এটিকে অস্বাভাবিক ও কূটনৈতিক নিয়মের লঙ্ঘন হিসেবে দেখেছেন।
সাধারণত কোনো দূতাবাস এ ধরনের স্পর্শকাতর আন্তর্জাতিক বিষয়ে সরাসরি কারও পক্ষ না নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকে। তবে ফরাসি দূতাবাসের এই পোস্ট শেয়ারকে অনেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের সমর্থনের নগ্ন প্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
ফরাসি দূতাবাসের এই পোস্ট শেয়ারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে এটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টিকে অস্বীকার করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেন। আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ফ্রান্সের মতো একটি দেশ, যারা সেক্যুলারিজম ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার, তারা কীভাবে এমন একটি বিবৃতি সমর্থন করতে পারে, যা সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে— এই প্রশ্ন উঠতে থাকে।
এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক মৈত্রী সম্পর্কের প্রেক্ষিতে এই ঘটনা আরও জটিলতা সৃষ্টি করে।
এই তীব্র সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফরাসি দূতাবাস আজ, ১৯শে মার্চ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতি শেয়ার করা সেই পোস্টটি তাদের ফেসবুক পেজ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি কূটনৈতিক ভুল সংশোধন এবং সম্ভাব্য বিতর্ক এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা। এই ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ফেসবুকে বিবৃতি প্রকাশ এবং তা ফরাসি দূতাবাসের শেয়ার করা—এই দুটি ঘটনাই কূটনৈতিক রীতিনীতির বাইরে গিয়ে সরকারের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এটিকে “অপরিপক্ক” ও “অপ্রত্যাশিত” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। তুলসি গ্যাবার্ডের মন্তব্য এবং তার প্রতিবাদে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফরাসি দূতাবাসের পোস্ট সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই বিতর্ক কিছুটা থামলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনও অজানা।