Wednesday 02 April, 2025

নিজ কর্মস্থল ঢাবিতে ড. আরেফিন সিদ্দিকের জানাজার অনুমতি মেলেনি

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 20:29, 14 March 2025

নিজ কর্মস্থল ঢাবিতে ড. আরেফিন সিদ্দিকের জানাজার অনুমতি মেলেনি

নিজ কর্মস্থল ঢাবিতে ড. আরেফিন সিদ্দিকের জানাজার অনুমতি মেলেনি

নিরাপত্তার তুচ্ছ অজুহাত তুলে সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জানাজা নিজের কর্মস্থল ঢাবিতে পড়ার অনুমতি দেয়নি ঢাবি প্রশাসন। পরে রাজধানীর নর্থ রোডের বায়তুল আকসা জামে মসজিদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে অংশ নিয়ে ঢাবির বর্তমান উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাবি ক্যাম্পাসে ড. আরেফিন সিদ্দিকের জানাজা না হওয়ার কারণ জানান।

নিয়াজ আহমেদ বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যারের জানাজা ঢাবিতে হচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক ভিসি হিসেবে তাকে সম্মান জানাতে সব আনুষ্ঠানিকতা করা হবে।

ভিসি হিসেবে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের উত্তরাধিকার ধরে রাখার চেষ্টা করবেন বলেও জানান অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।

এদিকে, ড. আরেফিন সিদ্দিকের সাবেক ছাত্রছাত্রীরা এ নিয়ে ঢাবি প্রশাসনের তুমুল সমালোচনায় লেখালেখি করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ড. মঈনুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, যে ঢাবি শিক্ষার্থীরা সারাদেশে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিল, তাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নেই সাবেক উপাচার্যের, এটা হাস্যকর নয়, লজ্জাজনক কথা। সোজা কথা বললেই হয়, চবি শিবিরের সাবেক রগকাটা নেতা- উপাচার্য নিয়াজ আর তার গ্যাং চায় না, আরেফিন স্যারের মত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কারো জানাজা হোক ঢাবি ক্যাম্পাসে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা মনে রাখা হবে।

ঢাবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আরেফিন স্যারের জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করা নিয়ে একাধিক আলোচনায় নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় সামনে আসে। পরে পরিবার ক্যাম্পাসের বাইরে জানাজা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১৩ই মার্চ, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। রাত পৌনে ১১টার দিকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২০০৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি উপাচার্যের দায়িত্ব পান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আরেফিন। নিয়োগের প্রায় সাড়ে চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়। নির্বাচনের পর ২০১৩ সালের ২৫শে অগাস্ট প্যানেলে থাকা তিনজনের মধ্যে আরেফিন সিদ্দিককে বেছে নেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও আচার্য আবদুল হামিদ।

১৯৫৩ সালের ২৩শে অক্টোবর ঢাকায় জন্ম নেওয়া আরেফিন সিদ্দিক ১৯৬৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ সালে বিএ এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ করেন তিনি। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেওয়ার আগে বুয়েটের পিআর ছিলেন আরেফিন সিদ্দিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের নেতা আরেফিন সিদ্দিক দুই মেয়াদে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রেস ইনস্টিটিউটের সদস্যও ছিলেন তিনি। উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার আগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সালে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে আবারও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান তিনি।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সম্প্রচার বিষয়ক বেশ কিছু জাতীয় কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।