Tuesday 15 April, 2025

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকে পরমাণু সমস্যা নিয়ে নতুন দিকনির্দেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:42, 13 April 2025

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকে পরমাণু সমস্যা নিয়ে নতুন দিকনির্দেশ

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকে পরমাণু সমস্যা নিয়ে নতুন দিকনির্দেশ

গতকাল, ১২ এপ্রিল, ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গঠনমূলক পরিবেশে সম্পন্ন হওয়ার কথা জানা গেছে। এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব সমাধানের পথ খুঁজে বের করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। ওমান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ আব্বাস আরাঘচি এই আলোচনার নেতৃত্ব দিয়েছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, আলোচনা একটি “গঠনমূলক এবং আশাব্যঞ্জক” পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে দুই পক্ষই পারস্পররের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তবে, উভয় পক্ষের মধ্যে এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যবধান রয়েছে, যা ভবিষ্যতের আলোচনায় সমাধানের জন্য প্রয়োজন।

সেখানে আমেরিকা ইরানকে চারটি শর্ত দিয়েছে, তা হল –

১। ইরানকে ইউরোনিয়াম এনরিচমেন্ট প্রজেক্ট সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে৷ ইরানের ইউরিনিয়াম মজুদ বর্তমানে যে ৬০% আছে তা কমিয়ে এনে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ করতে হবে। ইরান নিজেরা ইউরোনিয়াম প্রস্তুত বন্ধ করে তৃতীয় কোন দেশ থেকে ক্রয় করতে হবে৷

২৷ মধ্যপ্রাচ্যের যেসব সশস্ত্র সংগঠন আছে হামাস, হিজবুল্লাহ,হুতিরদের মত সংগঠন গুলোর সাথে ইরান কোন ধরনের সম্পর্ক রাখতে পারবে না এবং কোন ধরনের সহযোগিতা দিতে পারবে না।

৩। ইরান তাদের সব ধরনের মিসাইল প্রস্তুত বন্ধ করতে হবে এবং মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে৷

৪। ইয়েমেনের হুতিদের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে এবং লোহিত সাগরে ইস্রাইল ও আমেরিকা জাহাজের নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তা দিতে হবে ইরানকে৷

ইরান আমেরিকার চারটি শর্ত সরাসরি প্রত্যাখ্যান বা সম্মত না হয়ে জানিয়েছে, এইসব শর্ত একসাথে বাস্তবায়ন সম্ভব না, একটি একটি করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে৷ তারা আমেরিকার প্রথম শর্ত ইউরোনিয়াম এনরিচমেন্ট ৬০% থেকে কমিয়ে ২০% আসতে রাজি হয়েছে তবে তার জন্যে আমেরিকাকে চারটি শর্ত বাস্ততবায়ন করার দাবী জানিয়েছে। শর্ত গুলো হল –

১৷ ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
২৷ আমেরিকা ইরানের যত সম্পদ ও অর্থ ফ্রিজ করে রেখেছে তা ইরানকে ফেরত দিতে হবে৷
৩। ইরানের তেল ও গ্যাস রপ্তানিতে কোন ধরনের বাধা দেয়া যাবে না, ক্রেতা দেশগুলোকে কোন ধরনের কুটনৈতিক চাপ দেয়া যাবে না ইরানের থেকে জ্বলানি ক্রয় বিষয়ে।
৪। ইরানের পরমানু কর্মসূচিকে আমেরিকা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে৷

এই চারটি শর্ত আগামী দুইবছর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হবার পর ইরান পরবর্তী ২য় শর্ত নিয়ে আলোচনায় বসবে আমেরিকার সাথে। এই ভাবে পর্যাক্রমে ধাপে ধাপে আমেরিকার চারটি শর্ত গুলো নিয়ে আলোচনা পারস্পরিক সম্মতিতে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে ইরান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছিলেন যে, এই আলোচনা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণই একমাত্র বিকল্প। অন্যদিকে, ইরান জানিয়েছে যে, তারা কোনো জোরজবরদস্তি মেনে নেবে না এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত আছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি এই আলোচনাকে “একটি সুযোগ এবং একটি পরীক্ষা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা দুই পক্ষের অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করবে।

আলোচনার প্রথম দিনের ফলাফল হিসেবে, দুই পক্ষ পরবর্তী সপ্তাহে, বিশেষ করে ১৯ এপ্রিলে, আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ গতকাল ওমান থেকে ফিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছেন এবং তিনি বলেছেন যে, আলোচনা “খুবই ইতিবাচক এবং গঠনমূলক” ছিল। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভবিষ্যতের বৈঠকগুলোতে আরও অগ্রগতি হবে।

এই আলোচনার পটভূমিতে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ইসরায়েল, এই বৈঠকের ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলি নেতৃত্ব ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবে দেখে এবং তাদের মতামত হলো যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনা তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও জটিল করতে পারে। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং মনে করেছে যে, কূটনৈতিক সমাধানই এই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী উত্তর।

ওমানের মতো নিরপেক্ষ দেশের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা শুরু হওয়া মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি আশার আলো হতে পারে, তবে এটি সফল হবে কি না, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে গভীর বিশ্বাসের অভাব এবং অতীতের শত্রুতা এই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জজনক করে তুলেছে। তবে, গতকালের আলোচনা শেষে উভয় পক্ষই আরও আশাবাদী হওয়ার সংকেত দিয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ।