
সিডনিতে একুশে একাডেমীর আয়োজনে ২৫তম বইমেলা অনুষ্ঠিত
গত ৩ মার্চ সিডনি’র এ্যাশফিল্ড পার্কে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া’র আয়োজনে দিনব্যাপী ২৫তম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে থেকে ২০২৪ গত পঁচিশ বছর যাবৎ একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া এ্যাশফিল্ড পার্কে এই বইমেলার আয়োজন করছে। এ বছর সিডনি বইমেলার রজত জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক।
আনিসুল হকের নেতৃত্বে সকাল ৯ঃ২১ মিনিটে প্রভাত ফেরি’র মধ্য দিয়ে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উক্ত প্রভাত ফেরিতে ২৫টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানার এবং পুষ্পস্তবক নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া, সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে। তারপর থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে দেশীয় আদলে এই মেলায় প্রভাত ফেরি’র আয়োজন করছে।
এ ছাড়াও সিডনি, নিউক্যাসল এবং ক্যানবেরা থেকে বইমেলা প্রাঙ্গণ আগত বাংলাদেশিরা সাহিত্যপ্রেমীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণ করে ভাষা শহিদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সিডনির প্রায় ২৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন বয়সের সদস্য ও পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রভাতফেরীতে অংশ নেন। এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম প্রভাত ফেরির দৃশ্য অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ টেলিকাস্ট করেছেন।
জনাব নেহাল নেয়ামুল বারী’কে প্রবাসে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর গৌরবময় অবদান ও কীর্তির স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ভাষা দিবস আজীবন সম্মানন’ প্রদান করছে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া কথাসাহিত্যিক আনিসুল হককেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে অবদান রাখার জন্য ‘ভাষা দিবস সম্মানন’ প্রদান করা হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতার জন্য প্রভাত ফেরী’র সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফীকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। উক্ত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব আল্লামা সিদ্দিকী মনোনীত ব্যক্তিদেরকে হাতে মাতৃভাষা সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সনদপত্র তুলে দেন। একই সাথে একুশে একাডেমীর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতিন সম্মানসূচক উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
দুপুর ১ টায় একুশে একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসানের সঞ্চালনায় অফিসিয়াল প্রোগ্রামে বক্তব্য রাখেন মার্ক কুরি এমপি, রাষ্ট্রদূত আল্লাম সিদ্দিকী, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কনসাল জেনারেল সাখাওয়াৎ হোসেন, প্রভাত ফেরীর সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এবং আশীষ বাবলু প্রমুখ।
শাখাওয়াৎ নয়নের সম্পাদনায় একুশে একাডেমীর নিয়মিত প্রকাশনা ‘মাতৃভাষা’ সাহিত্য পত্রিকা সম্পর্কে আনিসুল হক ভূয়সী প্রশংসা করেন। আনিসুল হক এবং শাখাওয়াৎ নয়নের উপস্থাপনায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ১২ জন কবি-লেখকের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মরণে মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, মঞ্চনাটিকাসহ বিভিন্ন আয়োজন। ড. স্বপন পাল এবং লরেন্স ব্যারেলের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় এ বছরের মঞ্চসজ্জা এবং শহিদ মিনারের দুই পাশে একটি করে স্মৃতিস্তম্ভ যুক্ত করার বিষয়টি সকলেরই নজর কেড়েছে। শহিদ মিনারের ভাব-গাম্ভীর্য এবং নান্দনিকতার দিকটি বিশেষভাবে প্রশংসার দাবি রেখেছে।
বাংলাদেশ থেকে ইউপিএল এবং প্রথমা প্রকাশনীর স্টল এ বছর আবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আনিসুল হক দিনভর প্রতিটি স্টলে ঘুরে ঘুরে সিডনিবাসী বাঙালিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন, অটোগ্রাফ দিয়েছেন ও ছবি তুলেছেন, অকৃপণভাবে। সিডনি বইমেলা সম্পর্কে আনিসুল হক বলেন, ‘বই আর পাঠকের টানে আমি পৃথিবীর বহু দেশে গিয়েছি। ভেবেছিলাম অন্যান্য দেশের মতো সিডনিতেও ছোট পরিসরে বইমেলা হবে। কিন্তু আমার ভুল ভাঙে যখন মেলা প্রাঙ্গণে এসে দেখি এত বিশাল খোলা মাঠে প্রায় বাংলাদেশের মতোই আরেক টুকরো বাংলাদেশি একুশে বইমেলা’।
একুশে একাডেমী’র নিজস্ব সাংস্কৃতিক দল ‘অভিযাত্রী’র পরিবেশনায় নেতৃত্ব দেন আমিয়া মতিন, ফুলকলি ও কিশলয়ের নেতৃত্ব দেন সুমিতা দে, এবং নৃত্যানুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন পিয়াসা বড়ুয়া। নির্মল্য চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ২১-এর পটভূমিতে রচিত নাটকটি অনেকেরই মন কেড়েছে। একই সাথে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের সাথে সিডনিবাসী কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্তের কথোপকথন আলাদা রসের জোগান দিয়েছে।
একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রভাত ফেরীর সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও ইনার ওয়েস্ট সিটি কাউন্সিল, মাল্টিকালচারাল নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ক্যান্টাবেরি ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিল সার্বিকভাবে সহযোগিতার কথাও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। সবশেষে সহসভাপতি সুলতান মাহমুদ ‘২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫’বইমেলার তারিখ ঘোষণা করে সকল শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।