
পুরোপুরি বন্ধ আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ, তীব্র লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা
ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি পাওয়ার আবারো বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের বিদ্যুৎ সংকটকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। গতকাল থেকে শুরু হওয়া এই সরবরাহ বন্ধের ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা গ্রীষ্ম মৌসুমের আগমনে আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে অর্ধেকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশের দিক থেকে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া পরিশোধে দেরি। তবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) আদানিকে পুরো সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল, যা তখনো সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এবারের সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তটি বকেয়া পরিশোধ ও চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে চলমান বিরোধের ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে।
আদানি পাওয়ার বাংলাদেশকে প্রতি মাসে সাড়ে আট কোটি ডলারেরও বেশি পরিমাণে বিল দাবি করছে, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে গত বছরের নভেম্বর মাসে আদানি একটি ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছিল, এবং এখন সম্পূর্ণ সরবরাহই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই সরবরাহ বন্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে লোডশেডিংয়ের সমস্যা আরও তীব্র হতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রেও এই সংকটের নেগেটিভ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা আদানির সঙ্গে আলোচনা চলছে, তবে বকেয়া পরিশোধ ও চুক্তি শর্ত পূরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।” তবে, আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে এখনো এই বিষয়ে কোনো আধিকারিক মন্তব্য জানানো হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, যেখানে কিছু ব্যক্তি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংকট এবং আদানির সঙ্গে চুক্তির শর্তাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। একই সাথে, কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, এই সরবরাহ বন্ধ আগামী দিনগুলোতে আরও বড় বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
এই ঘটনার পটভূমিতে, বাংলাদেশ সরকার এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ আদানির সঙ্গে দ্রুত সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে।
তবে, যদি সমস্যা দ্রুত সমাধান না হয়, তবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন বিদ্যুতের চাহিদা শিখরে থাকে।