Monday 31 March, 2025

৫০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড এডিপি কাটছাঁট

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 23:25, 4 March 2025

৫০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড এডিপি কাটছাঁট

৫০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড এডিপি কাটছাঁট

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) রেকর্ড কাটছাঁট করেছে অন্তবর্তী সরকার। বাদ দেওয়া হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ। গত ৫০ বছরের ইতিহাসে এত বেশি বরাদ্দ কমানোর নজির নেই। থমকে যাওয়া অর্থনীতির বছর করোনা মহামারির সময়ও এত বরাদ্দ কমানো হয়নি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতা, কড়াকড়ি, পুরনো সমস্যার আবর্তে ঘুরপাকসহ নানা জঠিলতার কারেণ বিশাল অর্থ কাটছাট করতে হয়েছে। এছাড়াও এখন থেকে বাড়ি করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পুঙ্কানুপুঙ্খ অনুমোদন নিয়েই বাড়ি করতে হবে। এটা এবার কঠোরভাবে দেখার হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

৩ মার্চ সোমবার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও এনইসি চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

এবার গতবারের তুলনায় এই সময়ে এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

বিফ্রিং এ ড.ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনেক বড় বরাদ্দ দিয়ে ব্যয় করতে না পারলে সেটি ভালো দেখায় না। তাই চলমান অর্থবছর আমরা চাইছি এডিপি ছোট থাকুক। এছাড়াও আসন্ন বাজেটে বড় পরিবর্তন আসছে। আগে থেকেই রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় ঘাটতি বেশি রেখে বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এবার বাড়ি করতে হলে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড় পত্র নিতেই হবে। সেগুলো এখন কঠোরভাবে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

ব্রিফিং এ জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (স্বাযত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ছাড়া)। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ কাটছাঁট হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা।

মূল এডিপিতে চলমান প্রকল্প ছিল এক হাজার ৩৫২টি। এখন সংশোধিত এডিপিতে বেড়ে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৭টি। এছাড়া অননুমোদিত নতুন প্রকল্প কমে হয়েছে ৭৭০টি। যা মূল এডিপিতে ছিল ৯১০টি।

সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া পাঁচটি খাত হলো— পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৪৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, শিক্ষায় ২০ হাজার ৩৪৯ হাজার কোটি, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলীতে ১৯ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা।

মন্ত্রণালয় ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৬ হাজার ১৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ ২১ হাজার ৪৭৫ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ১৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।

ব্রিফিং এ জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরে ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত) এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানায়, গত অর্থবছরর এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এসে ২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কাটছাঁট করে মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।

এ অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দ কমিয়ে যা দেওয়া হয়েছিল তার ৮০ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার তিন কোটি টাকা। অর্থবছরের মাঝপথে এসে ১৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বাদ দিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।

শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল এরও কম দুই লাখ এক হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ বরাদ্দের ৮৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এরপর ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বাদ দিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই লাখ ১০ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল দুই লাখ তিন হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, বা ৯২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল এডিপি বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা কাটছাঁট সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ।