Tuesday 04 March, 2025

দেশে বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস, বেকার হচ্ছে লাখো শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 23:03, 1 March 2025

দেশে বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস, বেকার হচ্ছে লাখো শ্রমিক

দেশে বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস, বেকার হচ্ছে লাখো শ্রমিক

দেশের পোশাক শিল্পে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত ছয় মাসে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে, আরও অনেক কারখানা বন্ধের শঙ্কায় রয়েছে। গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলে অন্তত ৬৮টি কারখানা ইতোমধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের।

তবে আশার কথা শোনাচ্ছে ইপিবি, তাদের দেয়া তথ্যে রপ্তানি আয় এখনও বাড়ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানিতে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষ করে ওভেন পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ।

শিল্প মালিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকঋণ পরিশোধে অনিয়ম, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক মন্দার কারণে অনেক কারখানা টিকে থাকতে পারছে না। ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় অনেক কারখানা খেলাপি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, বিদেশি বায়ারদের অসহযোগিতা ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনাও মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “এখনো কারখানা বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান। ব্যাংক ও বায়ারদের অসহযোগিতার কারণে অনেক কারখানা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।”

কারখানা বন্ধের ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছেন। গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ার অনেক শ্রমিক বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা চালুর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে সড়ক অবরোধসহ নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, যা সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি জুলাই পরবর্তি ধ্বংসযজ্ঞ আর মন্দায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার কর্মি চাকরি হারিয়েছেন।

কিছুদিন আগে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৪ টি কারখানা লে-অফ ঘোষনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পোশাক শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি সংকট দেখা দিতে পারে। ব্যাংক ঋণ সহায়তা, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করলেই কেবল এই খাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন ইপিবির দেয়া তথ্য সঠিক চিত্র ফুটে উঠছে না।বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এক লাখ ৭৬ হাজার বেশি বেকার ছিল। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ লাখের বেশি। ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কারখানা বন্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমতবস্থায় কিভাবে রপ্তানির অংক বেড়েছে, এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি পোশাক খাত। তাই সরকার, শিল্প মালিক এবং শ্রমিকদের সমন্বিত উদ্যোগই পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে।