
রোজার আগেই মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের বাজার আগুন
রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের প্রতিশ্রুতি যেন ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইতিমধ্যে আকাশ ছুঁয়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে কাঁচাবাজারের বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ বেগুন, শসা ও লেবুর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লেবু প্রতি হালি ৮০ টাকা চলছে। তাও বেছে নেওয়া যাবে না। মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম বেড়েছে একমাস আগেই, এখনও সেই দামেই রয়েছে। খেজুর-ছোলা আমদানির পর দাম কমার কথা বলা হলেও বাজারদর বলছে ভিন্ন কথা। ভোজ্যতেলের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে আগেই। পুরনো লেবেল তুলে নতুন দামে বাজারে ছাড়া হয়েছিল বলে গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল। তবে সেই ভোজ্যতেল এখন উধাও বাজার থেকে।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজার সিন্ডিকেট ভোজ্যতেল নিয়ে তেলেসমাতি শুরু করেছে। কৃত্রিম হাহাকার তৈরি করে অধিক মুনাফায় ভোজ্যতেলের ডিলাররা এই কারসাজি করেছে বলে দাবি তাদের।
২৮শে ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে বেগুনের কেজি মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কয়েকদিন আগেও যে লেবুর হালি ২০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন একটি লেবুর দামই ২০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শসার দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। তবে শীতকালীন সবজির দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। রোজায় শাক-সবজির চাহিদা কমে যায় বলে দাম খুব একটা বাড়েনি। ফুলকপি, গাজর, টমেটো ও শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ অত্যন্ত কম। ক্রেতাদের দোকান থেকে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেও নির্ধারিত দামে মিলছে না। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, আটা, ময়দা বা পোলাওয়ের চাল না কিনলে ডিলাররা সয়াবিন তেল দিচ্ছেন না। চট্টগ্রামে সয়াবিন তেল উধাও হয়েছে খুচরা বাজার থেকে। ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরছেন। নিতান্ত পরিচিত বা নিয়মিত ক্রেতা না হলে সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা।
মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম আগের মতোই চড়া। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারত থেকে চাল আমদানি করলেও তা বাজারে প্রভাব ফেলেনি, কারণ যৌক্তিক মূল্যে একই মানের চাল আনা সম্ভব হয়নি। পাকিস্তান থেকে সরকার ৫০ হাজার টন চাল আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে সোয়া ১৫ কোটি টাকা বেশি মূল্য দিয়ে কিনে আনতে চুক্তি করেছে। যে চালের প্রথম চালান আসবে ৩রা মার্চ। বাজারে সেই চাল ঢুকলে বর্তমান বাজার দরের চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। ফলে আমদানি করলেও ক্রেতাদের জন্য সুখবর বয়ে আনছে না।
মাংসের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির কেজিপ্রতি দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বুধবার ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ১৮০-২০০ টাকা ছিল। সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ২৮০-৩১০ টাকা হয়েছে।
গরু ও খাসির মাংসের দামও বেড়েছে। বুধবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগেও কিছুটা কম ছিল। খাসির মাংসের দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে ১,২০০ টাকায় পৌঁছেছে। ছাগলের মাংস বিক্রি হয়েছে ১,০৫০-১,১০০ টাকায়।
মাছের বাজারেও একই অবস্থা। চাষের চিংড়ি, কই, শিং, তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। নদীর মাছের দাম আরও বেশি। যদিও অভিযোগ রয়েছে, নদীর মাছ বলে অধিকাংশ বাজারে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত চাষের মাছ বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের আইড় ও বোয়াল কিনতে হলে ২,০০০ টাকারও বেশি খরচ করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ছোট ও মাঝারি আকারের রুই, মৃগেল, কাতলা মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬০-৭০ টাকা।