
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের হেফাজতে নির্যাতন
ফ্রান্স-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের উত্তরা পশ্চিম থানায় হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছে। গত ৮ থেকে ১২ এপ্রিল ২০২৫-এ পুলিশ রিমান্ডের সময় তাঁর ওপর নৃশংস শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্র এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর এবং বিশিষ্ট আইনজীবী তুরিন আফরোজকে হেফাজতে থাকাকালীন দুই নারী পুলিশ কর্মকর্তা এবং বেসামরিক পোশাকে একজন পুরুষ ও একজন নারী মিলে নির্যাতন করেছেন। তাঁকে লাঠি দিয়ে উরু ও পায়ে প্রহার, লাথি, চড়, ঘুষি এবং শরীরের পেছনের অংশে বারবার আঘাত করা হয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তুরিনের আইনজীবী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেন। তুরিন নিজে সাহসিকতার সঙ্গে তাঁর নির্যাতনের বিবরণ দেন, কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং আদালতে তাঁর শরীরে আঘাতের দৃশ্যমান চিহ্ন দেখান। কিন্তু এত গুরুতর অভিযোগ এবং দৃশ্যমান প্রমাণ সত্ত্বেও ম্যাজিস্ট্রেট এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি বা স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দেননি।
তুরিন আফরোজকে গত ৭ এপ্রিল ২০২৫-এ মধ্যরাতে উত্তরার বাসা থেকে বিতর্কিতভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে বিরোধী-বিদ্বেষী বিক্ষোভের সময় কথিত হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক ব্যবহার এবং শারীরিক হামলার মতো একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা তাঁর মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠকে দমিয়ে দেওয়ার স্পষ্ট প্রয়াস।
এর আগে ২০২৪ সালের আগস্টে নীলফামারীর জলঢাকায় তাঁর ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর এবং উত্তরার বাসায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হামলায় তিনি নির্যাতনের শিকার হন। সেই হামলায় তাঁকে সিগারেটের ছ্যাঁকা, শারীরিক ক্ষত এবং লিঙ্গ ও ব্যক্তিগত পরিচয়-সংক্রান্ত মৌখিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
জেএমবিএফ-এর প্রধান উপদেষ্টা ফরাসি মানবাধিকার কর্মী রবার্ট সিমন বলেন, “নির্যাতন শুধু ব্যক্তিগত মর্যাদার লঙ্ঘন নয়, এটি মানবতার বিবেকের ওপর আঘাত। তুরিন আফরোজের ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতন বাংলাদেশে আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের বিপর্যয়কর ভাঙনের প্রতিফলন। আমরা অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত, দায়ীদের বিচার এবং পুনরাবৃত্তি রোধের নিশ্চয়তা দাবি করছি।”
জেএমবিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী শাহানুর ইসলাম বলেন, “তুরিন আফরোজের নির্যাতন রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলার শাস্তি হিসেবে ব্যবহারের নগ্ন প্রকাশ। আমরা তুরিনের পাশে আছি এবং রাষ্ট্রীয় সহিংসতার শিকার সবার জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছি।”
জেএমবিএফ-এর দাবি
জেএমবিএফ বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্প্রদায়ের কাছে নিম্নলিখিত দাবি জানিয়েছে:
তুরিন আফরোজের হেফাজতে নির্যাতনের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত।